রাজশাহী প্রতিনিধিঃ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের রহস্যজনক মৃত্যু, আত্মহত্যা বা হত্যাকাণ্ড নতুন কিছু নয়। অতীতের অনেক ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে,এ ধরনের মৃত্যুর পেছনে প্রায়শই লুকিয়ে থাকে বড় রহস্য।যা কোন অস্বাভাবিক মৃত্যুর মরদেহ উদ্ধারের পর পোস্টমর্টেমসহ অন্যান্য তদন্তের মাধ্যমে উন্মোচিত হয়েছে।এসব ঘটনার রহস্য উদঘাটিত হয়েছে-বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পরবর্তীতে পুলিশের সুস্পষ্ট ভূমিকার কারণেই।

সম্প্রতি রাবি শিক্ষার্থী শাহরিয়ারের মৃত্যুরহস্য নিয়েও তৈরী হয়েছে ধোয়াসা।লাশের ময়নাতদন্ত না হওয়ার কারণে কেউই জানে না তার মৃত্যুটি আত্মহত্যা,দুর্ঘটনা নাকি হত্যাকাণ্ড।

অতীতে বিভিন্ন ক্যাম্পাসগুলোতে এ ধরনের ঘটনার পরে ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ হস্তান্তরের কোন নজীর নেই।এ ক্ষেত্রে সবথেকে বড় ভূমিকা পালন করেছে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ।আগের অনেক ঘটনার সাথে মিল থাকলেও রাবির সেই শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে ক্যাম্পাস প্রশাসনের এ ধরনের কোন ভূমিকা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি।এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে জনমনে।এই প্রশ্ন ক্যাম্পাস পেরিয়ে এখন দেশজুড়ে।

এই প্রতিবেদনে অতীতে রাজশাহী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু শিক্ষার্থীদের এ ধরনের মৃত্যু ও পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং পুলিশের পদক্ষেপ কী ছিল;তা জানার চেষ্টা করেছে প্রতিবেদক।

নাসিম হত্যাকাণ্ড: ২০১০ সালের ১৫ আগস্ট রাবি ক্যাম্পাসের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ছাত্রলীগ কর্মী নাসিরউল্লাহ নাসিমকে দলীয় কোন্দল ও ইফতারের টোকেন ভাগাভাগির জের ধরে শাহমখদুম হলের ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করা হয়।এ ঘটনায় মতিহার থানায় পাল্টাপাল্টি দুটি মামলা দায়ের করা হয়।যথারীতি ময়নাতদন্ত করা হয়।এ ঘটনায় আসামী ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাজেদুর ইসলাম অপু গ্রেফতার হন।

লিপু হত্যা: ২০১৬ সালের ২০ অক্টোবর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব আব্দুল লতিফ হলের ড্রেন থেকে রাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মোতালেব হোসেন লিপুর অর্ধনগ্ন মরদেহ উদ্ধার করা হয়। অনেকেই ওই সময় ধারণা করেছিলেন,তাকেও ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করা হয়।এ ক্ষেত্রেও যথারীতি একই পথে আইন প্রয়োগ করা হয়।

রুস্তম হত্যা: ছাত্রলীগের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রুস্তম আলী আকন্দ ২০১৪ সালের ৪ এপ্রিল নিজ কক্ষে রহস্যজনকভাবে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।

সোহেল হত্যা: ২০১২ সালের ১৫ জুলাই রাতে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের নেতাকর্মীদের মাঝে গোলাগুলির ধটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের নতুন বর্ষের ছাত্র ও ছাত্রলীগ কর্মি আব্দুল্লাহ আল হাসান ওরফে সোহেল।সব ক্ষেত্রেই আইন এইকইভাবে প্রয়োগ হয়েছিল।একটু উদ্যোগ নিলেই বিস্তারিত জানা যাবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় : চলতি বছরের ১১ মে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী অমিত কুমার বিশ্বাস বৃষ্টিতে ভিজতে গিয়ে আবাসিক হলের ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যুবরণ করেন।এরপর রাতে তার বিছানার বালিশের নিচে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করা হয়।সেখানে উল্লেখ থাকে,সে আত্মহত্যা করেছে।সুইসাইড নোট পাওয়ার পরেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেই নোট নিহত ছাত্রের কি না তা জানতে ফরেনসিক টেস্ট করে লাশের ময়নাতদন্ত করায়।এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়।

সাধারণত ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১৭৪ ধারা এবং PRB নিয়ম ২৯৯ অনুযায়ী আত্মহত্যা কিংবা সন্দেহজনক মৃত্যুর ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১৭৪ ধারায় অপমৃত্যুর মামলা হয়।লাশের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পরে পুলিশ মামলাটি তদন্ত করে আদালতে পাঠায়।পরে আদালত সবকিছু দেখে যথাযথ নির্দেশ দেন।শাহরিয়ারের মৃত্যুর ঘটনার ক্ষেত্রে ময়নাতদন্ত বা অপমৃত্যুর মামলা, কোনটাই হয়নি।

বিশ্লেষকরা বলছেন,গত ১৯ অক্টোবর রাতে শহীদ হবিবুর রহমান হলের ছাদ থেকে পড়ে সেই ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনাকে তুচ্ছ ভাবে দেখার কোনো কারণ নেই।বর্তমান সরকারকে বিব্রত করতে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি এবং রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (রামেক) স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করতে এ ঘটনা ঘটাতে পারে। সরকারবিরোধী মৌলবাদী চক্র সবসময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্রিয়।এই ঘটনার পেছনে তাদের কোন চক্রান্ত আছে কিনা তা জানতেও লাশের ময়নাতদন্ত ও যথেষ্ট পুলিশী সক্রিয়তাও জরুরী ছিল।

তারা আরও বলেন,শাহরিয়ারের মৃত্যুর পর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কী করেছেন? প্রশাসনের ভূমিকাও কী ছিল? এটি এখন জনগণের প্রশ্ন।হাজার-হাজার ছাত্রছাত্রী যে ক্যাম্পাসে থাকে সে ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কী দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়েছেন? এটাই জনগণের কাছে পরিষ্কার হওয়া উচিত। শাহরিয়ারের দ্রুত ময়নাতদন্ত করে এ মৃত্যুর সঠিক রহস্য উদঘাটন এখন সময়ের দাবি।